অনলাইন শিক্ষাকে জনসাধারণের কল্যাণ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

এডুকেশন হিরো আপডেটঃ ১২ নভে, ২০২১

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 

কোভিড মহামারীর এই সময়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম যে ‘নতুন স্বাভাবিকতায়’ পরিণত হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে দূর শিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষায় সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্যারিসে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, মহামারীর এই সময়ে সম্পদ আর প্রযুক্তির অভাবের কারণে স্কুলে যাওয়ার হার, সাক্ষরতার হার এবং তরুণ ও বয়স্কদের শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বহু দশকের কষ্টার্জিত অর্জন নষ্ট হয়েছে। এই মহান ফোরামে আমি আহ্বান জানাতে চাই, দূর শিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষাকে সর্বজনীন ঘোষণা করুন।  

আর এ ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকার, বেসরকারি খাত এবং অংশীজনদের নিয়ে কাজ করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে ইউনোস্কের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

মহামারির দুই বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বড় ধরনের ক্ষত তৈরি হয়েছে, সে কথাও বক্তৃতায় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। 

মহামারির কারণে বহু দেশে আংশিক বা পুরোপুরিভাবে স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। আর এর প্রভাব বিশ্বের অর্ধেক শিক্ষার্থীর ওপর পড়েছে বলে তথ্য দিয়েছে ইউনেস্কো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সঙ্কটের মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমই ‘নতুন স্বাভাবিকতায়’ পরিণত হয়েছে। একইসঙ্গে তা একটি নতুন বৈষম্যও প্রকাশ্যে এনেছে। 

ডিজিটাইজেশন অনেক সেবাপ্রাপ্তি এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ সহজ করেছে, কিন্তু সেই সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যহারের কারণে ক্ষতিকর কনটেন্ট ঘৃণা ছড়ানোর মত ঘটনায় উদ্বেগও যে বাড়ছে, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।

আর তাতে করে সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইউনেস্কোর মত বিশ্ব সংস্থাগুলোর এসব বিষয় নিয়েও কাজ করা উচিত।

জলবায়ু সঙ্কেটের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এটা কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়,বিশ্বের বহু দেশের জন্যই একটি ‘প্রাণঘাতী বাস্তবতা’। আমরা ইউনেস্কোকে জলবায়ু শিক্ষার উপর আরও বেশি জোর দেওয়ার এবং জলবায়ু সঙ্কটের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে বৃহৎ পরিসরে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করার আহ্বান জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দ্রুততর হওয়ায় সমুদ্রের পরিবেশ প্রভাবিত হচ্ছে। সেজন্য জরুরি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রয়োজন।

উপকূলীয় এবং ইউনেস্কোর ইন্টারগভর্নমেন্টাল ওশানোগ্রাফিক কমিশনের (আইসিসি) সম্মুখসারির দেশ হিসাবে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব সমাধানের ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের অঞ্চলে আইসিসির শক্তিশালী উপস্থিতি দেখতে চাই।

তিনি বলেন, শিক্ষা হল একটি মৌলিক মানবাধিকার, আর মানব সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাই হল মূল ভিত্তি।  আর সেজন্য বাংলাদেশে যেসব উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তার একটি বিবরণও তিনি বক্তৃতায় তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের ‘সত্যিকারের বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেন। বাংলাদেশের শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবনমানের উন্নতিতে কতটা ভূমিকা রাখা গেল, তার ওপরই ইউনেস্কোর সাফল্য নির্ভর করছে। আমরা যখন একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তখন একটি শক্তিশালী, গতিশীল, উদ্ভাবনী বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। শান্তির সুরক্ষা বলয় পড়তে বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যেতে প্রস্তুত।

তিনি ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার মহান আত্মত্যাগকে চিহ্নিত করে ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

 তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
 
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী, আমরা শান্তির সংস্কৃতির ধারণাকে প্রচার করি- এমন একটি ধারণা যা সহনশীলতা, সম্মান এবং সহানুভূতির মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং এটি মানব সমাজের উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।

সরকারপ্রধান বলেন, অতএব, বাংলাদেশে আমরা শিক্ষা নিয়ে একটি টার্গেটেড পন্থা তৈরি করেছি। সুনির্দিষ্ট নীতিগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় তালিকাভুক্তি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা এবং বালিকা শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি।

অনুরূপভাবে, আমরা ভবিষ্যত কর্ম-জগতের জন্য ব্যবহারিক প্রয়োজনকে মোকাবেলা করে বিশ্বাস-ভিত্তিক শিক্ষাকে আধুনিক করেছি। আমরা জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকদের জন্য মাতৃভাষা ভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করছি, তিনি বলেন।

তিনি হাইলাইট করেছেন যে দেশের প্রায় ৮৩ হাজার স্কুলে আইসিটি ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, সরকার ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে আসছে। এ বছর সরকার প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছে।
 
সরকারপ্রধান বলেন, শিক্ষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আমরা কোভিড পরিস্থিতির উন্নতির সাথে আমাদের স্কুল খুলেছি, আমরা ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিচ্ছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url