চিকিৎসক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে চেম্বার-অস্ত্রোপচার বন্ধ

এডুকেশন হিরো আপডেটঃ ১৭ জুল, ২০২৩

 


ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোম ও মঙ্গলবার দুদিন ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখছেন সারা দেশের গাইনি চিকিৎসকরা।


গাইনি চিকিৎসকদের এই কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়েছে চিকিৎসকদের অন্যান্য সংগঠনগুলোও। চিকিৎসা খাতের প্রায় সব চিকিৎসক তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখবেন এ দুই দিন।


ফলে সোম এবং মঙ্গলবার কার্যত দেশের বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা সেবা পাবেন না। তবে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা সেবা দেবেন বলে সংগঠনগুলোর তরফ থেকে জানানো হয়েছে।


সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গাইনি ও প্রসূতিবিদ চিকিৎসকদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিল গত শনিবার।


সোসাইটি অব সার্জন, বাংলাদেশের সভাপতি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম জানান, সোমবার ও মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে আমরা ওজিএসবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছি। সোম ও মঙ্গলবার ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রাখব। পাশাপাশি সেখানে কোনো ধরনের অস্ত্রোপাচারও হবে না। এটা শুধু চেম্বারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চালু থাকবে, অস্ত্রোপচারও হবে।


বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানিয়েছেন, সোসাইটির সদস্যরা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রাখবেন। তবে জরুরি পরিস্থিতে রোগী ফেরানো হবে না। আমরা কর্মসূচি পালন করব। কিন্তু গতকাল আমাদের মিটিং ছিল।


সেখানে বলেছি জরুরি কোনো রোগী এলে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। সেটা চেম্বারে হলেও। এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। ইমার্জেন্সি রোগী যেন এফেক্টেড না হয়, কিন্তু রুটিন কেইস দেখব না—জানান অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর।


অনেক চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও রোগী দেখেন। সেসব চেম্বার বন্ধ থাকলে বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে—জানিয়েছেন চিকিৎসক সংগঠনগুলোর নেতারা।


এখন পর্যন্ত সোসাইটি অব সার্জনস, বাংলাদেশ; বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন, বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতি; মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ; বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থিসিওলজিস্টস ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিশিয়ান্স; অ্যাসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশ রয়েছে আন্দোলনে।


এছাড়াও বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি; সোসাইটি অব অটোলারিঙ্গোলজিস্ট অ্যান্ড হেড নেক সার্জনস অব বাংলাদেশ, সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ; বাংলাদেশ একাডেমি অব প্যাথলজি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হেপাটোলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও একাত্মতা জানিয়েছে ওজিএসবির কর্মসূচির সঙ্গে।কর্মসূচি নিয়ে এসব সংগঠন পৃথক বিবৃতি এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সবগুলো সংগঠনের সদস্যদের প্রতি নির্দেশনাও মোটামুটি একইরকম। সংগঠনের সদস্যদের কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার দেশজুড়ে মানববন্ধন করেছেন গাইনি চিকিৎসকরা।


এর আগে স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান জন্ম দিতে গত ৯ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কুমিল্লার প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখি। সেখানে পরদিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার সন্তানের জন্ম হয়। ওই নবজাতক সেদিনই মারা যায়।


এরপর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আঁখিকে পাশের ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়; যেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ জুন মারা যান তিনি।


এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে মামলা করলে পুলিশ সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে ১৫ জুন গ্রেপ্তার করে। এখনও তারা কারাগারে আটক আছেন। জামিন চেয়ে করা তাদের একাধিক আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আদালত।


কুমিল্লার গৃহবধু আঁখি সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনার জন্য সংযুক্তা সাহা ও সেন্ট্রাল হাসপাতাল একে অন্যকে দোষারোপ করে আসছে।


কপিরাইট © টিডিসি রিপোর্ট 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url