শিক্ষা রক্ষায় নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

Admission News Result আপডেটঃ ১৮ সেপ, ২০২৩

 

নতুন শিক্ষাক্রমকে ‘শিক্ষা বিধ্বংসী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে দেশের বামপন্থী, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। নতুন শিক্ষক্রম বাতিলসহ ‘শিক্ষা রক্ষায়’ জাতীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ, গণপরিবহণে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফপাস চালু, পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষক সংকট নিরসন ও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালুর আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র নেতারা। 

মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়। 

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের দাবিগুলো হলো, সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং একই ধারার শিক্ষা নীতি প্রণয়ন কর, শিক্ষা বিধ্বংসী নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম বাতিল, জাতীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা, মেট্রোরেলসহ সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফপাস চালু, ডাকসুসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করা, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষক সংকট নিরসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেনা-গোয়েন্দা নজরদারি বন্ধ করা, পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং সব জাতির অধিকার নিশ্চিত করা।

সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, ৬২তে শিক্ষা আন্দোলন হয়েছিলো বাবুল, অলিউল্লাহসহ নাম না জানা অনেকেই শিক্ষা রক্ষার আন্দোলন ও শিক্ষার সংকোচনের বিরোধিতা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। শিক্ষা আন্দোলনে যারা প্রাণ দিলেন তারা কিন্তু সমাজের অতি মানুষের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও তার অধিকার থেকে বঞ্চিত এই শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের ভাগ্যের কোনো উন্নতি হয়নি। এটি থেকে মুক্তির একটাই উপায় সার্বজনীন ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা বলেন, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে থেকে দেশে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ৫টি মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু হলেও পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং প্রশিক্ষণের অভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই কার্যক্রমও আলোর মুখ দেখছে না। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেনা-গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। আমার আহ্বান অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, করোনা মহামারীতে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত, সেই বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে নতুন করে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হলো। একটা শিক্ষাক্রম হবে গণতান্ত্রিক। অথচ এখানে শিক্ষক শিক্ষার্থী কারো মতামত না নিয়ে একান্ত নিজেদের সিদ্ধান্তে গণতান্ত্রিকভাবে সেই শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই শিক্ষানীতিতে বলা হচ্ছে আমরা একদল মানুষ তৈরি করবো। যদি আপনারা সেই শিক্ষাক্রম পড়ে দেখেন, পুরো শিক্ষাক্রমের মধ্যে কিভাবে মানবিক ও যৌক্তিক মানুষ হতে হবে, মানুষের চরিত্র ও জাতি নির্মাণ হবে তার কোনো কথা বলা নেই। সেখানে বলা হয়েছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা, বড় বড় দেশ ইনভেস্ট করবে এবং আমরা হবো তাদের বাজার। আর আর সেই বাজার উপযোগী এক দল শ্রমিক তৈরি করার জন্য নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, এই যে এতো যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, যে উন্নয়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই উন্নয়নে একজন রিকশাচালক কিভাবে উঠতে পারবে? মেট্রোরেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়জন শিক্ষার্থী ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তরা যেতে পারবেন? উন্নয়নের নামে বড় বড় স্ট্রাকচার বড় বড় বিল্ডিং, সেই বিল্ডিং দেখে রিকশাচালকের পেট ভরে না। ছাত্রের স্কুলের ফি হয় না, শিক্ষার খরচ হয় না। গত ১৫ বছরের উন্নয়নে বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের যাঁতাকলে আজ পিষ্ট। আর এই উন্নয়নে মাঝে শিক্ষার উন্নয়নও ঘটছে। প্রতি বছর এই জিপিএ-৫ সংখ্যা লাফ দিয়ে লাফ দিয়ে বাড়ছে। আর যখন একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা দিতে এসে চান্স পায় না, তখন সেই জিপিএ ৫ পাওয়ার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। 

দেশের ৮টি বামপন্থী, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ নভেম্বর এ জোট আত্মপ্রকাশ করে। জোটভুক্ত ছাত্র সংগঠনগুলো হলো, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন এবং বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।

সোর্স: দৈনিক শিক্ষা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url